ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে থাকছে ডায়াবেটিকস কমানোর ঘরোয়া উপায়। এবং এছাড়াও খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়। আপনার যদি হঠাৎ ডায়াবেটিক্স বেড়ে যায় তার করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।

ডায়াবেটিস-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়

এবং হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি খেতে হবে তার সম্পর্কেও নিম্ন বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তাহলে দেরি না করে চলুন ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পেইজ সূচিপত্রঃ ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি সমূহ

ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সমূহ 

আপনি কি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চান। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য যতগুলো পরিচিত এবং কার্যকর ঘরোয়া উপায় রয়েছে, সেগুলো আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি। মনে রাখবেন, এই পদ্ধতিগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, তবে এগুলো কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ বা চিকিৎসার বিকল্প নয়। আপনার ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বদা একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তাহলে দেরি না করে চলুন ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ

গোটা শস্য: লাল আটা, ঢেঁকিছাঁটা চাল, ওটস, বার্লি - এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ধীর করে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শাকসবজি: বাঁধাকপি, ফুলকপি,পালং শাক, শসা, টমেটো, গাজর মেথি শাক, ব্রকলি, - এগুলোতে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। এগুলো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থেরও ভালো উৎস।

ফলমূল: আপেল, জাম, পেয়ারা, কমলালেবু, বেরি - ফলগুলোতে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও ফাইবারের কারণে তা ধীরে ধীরে শোষিত হয়। তবে মিষ্টি ফল (যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু) পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঃ  ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর সহজ উপায়

ডাল এবং মটরশুঁটি: মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, মটর - এগুলো প্রোটিন এবং ফাইবারের চমৎকার উৎস, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কম শর্করাযুক্ত খাবার:

চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার: মিষ্টি পানীয় (কোমল পানীয়, জুস), মিষ্টি ডেজার্ট, মিষ্টি চা বা কফি - এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকতে পারে।

 লাল চাল ও লাল আটা ব্যবহার করুন: এগুলোতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে ধীরে ধীরে বাড়ায়।

পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ: ডিম, মাছ, চিকেন (চামড়া ছাড়া), এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন (ডাল, বাদাম, বীজ) খাবারের সাথে অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রোটিন পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি রোধ করে।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ: অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম (যেমন কাঠবাদাম, আখরোট), এবং বীজ (যেমন চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্স সিড) পরিমিত পরিমাণে খান। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

আরও পড়ুনঃ চিরতরে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

নিয়মিত খাবার গ্রহণ: দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময় পর পর অল্প পরিমাণে খাবার খান। দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখলে পরবর্তীকালে বেশি খাবার গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে (কমপক্ষে ৮ গ্লাস) বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি। পানি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখতে এবং রক্তে শর্করার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মিষ্টি পানীয়ের পরিবর্তে পানি পান করার অভ্যাস করুন।

প্রাকৃতিক উপাদান

কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে:

মেথি: মেথি ভেজানো পানি (রাতে এক চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করা) অথবা মেথি গুঁড়ো খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। মেথিতে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা শর্করা শোষণকে ধীর করে।

পেঁয়াজ: কাঁচা পেঁয়াজ সালাদে বা রান্নায় ব্যবহার করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপকার পাওয়া যায়। পেঁয়াজে থাকা কিছু উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

আমলকি: আমলকিতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আমলকির রস বা কাঁচা আমলকি খাওয়া যেতে পারে।

হলুদ: হলুদে কারকিউমিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা প্রদাহ কমাতে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে বা রান্নার সময় হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে।

করলা: করলার রস পান করা বা রান্না করে খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। করলায় চ্যারিটিন এবং মোমোরডিসিন নামক উপাদান থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

জাম: জাম এবং জামের বীজ উভয়ই ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। জামের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সকালে খালি পেটে পানিতে মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

আদা: আদা চা পান করা বা রান্নার সময় আদা ব্যবহার করা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়

দারুচিনি: দারুচিনি গুঁড়ো খাবারের সাথে মিশিয়ে বা পানিতে ফুটিয়ে পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

তুলসী: তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া বা তুলসী চা পান করা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করতে পারে।

নয়নতারা: নয়নতারা গাছের পাতা ও ফুল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকার পাওয়া যায়। তবে এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ:

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি ধরণের ব্যায়াম (যেমন দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাঁতার, সাইকেল চালানো) করা জরুরি। ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

সক্রিয় থাকা: দিনের বেলা একটানা বসে না থেকে মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়ানো এবং হাঁটাচলা করা উচিত। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করার অভ্যাস করুন।

যোগা ও মেডিটেশন: যোগা এবং মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

জীবনধারা পরিবর্তন:

পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো শরীরের হরমোন balance বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

ধূমপান পরিহার: ধূমপান ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়াতে পারে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।

আরও পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই যোগা, মেডিটেশন, শখের কাজ বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, তবে এগুলো কোনোভাবেই ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ বা চিকিৎসার বিকল্প নয়।

যেকোনো ঘরোয়া পদ্ধতি শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন বা ওষুধ খাচ্ছেন।

নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার ডায়েট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ এবং এর সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা এবং ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা অপরিহার্য।

খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

উপরোক্ত থেকে জেনে আসলাম কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস কমানো যায়। এখন আমরা জানবো কিভাবে খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানো যায়। আপনি যদি খালি পেটে ডায়াবেটিস কমাতে চান তাহলে নিম্নে থেকে পড়তে থাকুন।

খালি-পেটে-ডায়াবেটিস-কমানোর-উপায়

খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর জন্য কিছু উপায় রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ এবং এর সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কেবলমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ এবং নিয়মিত চিকিৎসা এক্ষেত্রে অপরিহার্য।

খালি পেটে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু উপায় সম্পর্কে  নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

মেথি ভেজানো পানি: রাতে এক চা চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। মেথিতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করে এবং গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

করলার রস: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২৫-৩০ মিলি করলার রস পান করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। করলায় থাকা কিছু উপাদান যেমন চ্যারানটিন এবং মোমোরডিসিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে এর স্বাদ তেতো হওয়ায় অনেকের জন্য এটি গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

পেঁয়াজ: কাঁচা পেঁয়াজ অথবা পেঁয়াজের রস খালি পেটে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। পেঁয়াজে থাকা কিছু উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

জাম পাতা বা বীজ: জাম গাছের পাতা বেটে অথবা শুকনো জামের বীজ গুঁড়ো করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। জামের বীজে জাম্বোলিন নামক একটি উপাদান থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে।

তুলসী পাতা: প্রতিদিন সকালে ২-৩টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া অথবা তুলসী পাতার রস পান করা খালি পেটে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তুলসীতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে যা ইনসুলিন নিঃসরণে সাহায্য করে।

হালকা ব্যায়াম: ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা ব্যায়াম যেমন দ্রুত হাঁটা, যোগা অথবা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত কঠোর ব্যায়াম খালি পেটে করা উচিত নয়।

পর্যাপ্ত পানি পান: ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পর্যাপ্ত পরিমাণে (কমপক্ষে এক গ্লাস) পানি পান করা বিপাক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

চিনি ও মিষ্টি পরিহার: সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফির সাথে চিনি অথবা মিষ্টি খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।

হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে করণীয়

আপনার যদি হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে যায় তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় কি। চিন্তার কোন কারণ নেই আপনার যদি হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে যাই তাহলে নিম্নে করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরা হলো তা বিস্তারিত জেনে নিন। 

আরও পড়ুনঃ  ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত আপনার ব্লাড গ্লুকোজ মিটার দিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে নিবেন। এবং  আপনার যদি ডায়াবেটিস এর মাত্রা অনেক বেশি হয়। এবং আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, যেমন ঝাপসা দৃষ্টি, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব বা দুর্বলতা, তাহলে দ্রুত আপনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ বা নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন।

 ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করবেন।এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি, যা অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করবে। হালকা খাবার গ্রহণ করুন যা সহজে হজমযোগ্য এবং চিনিমুক্ত। ভারী বা মিষ্টি খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন। বিশ্রাম নিন এবং শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দিন, কারণ অতিরিক্ত exertion রক্তে শর্করার মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন, কারণ এটিও ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে। আপনার ডায়াবেটিস কিটের সরঞ্জাম এবং ওষুধ হাতের কাছে রাখুন। জরুরি অবস্থার জন্য আপনার পরিচিতদের অবহিত করে রাখুন এবং প্রয়োজনে তাদের সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না। মনে রাখবেন, দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ জটিলতা এড়াতে সহায়ক হতে পারে।

ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি খেতে হবে

আপনার যদি হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে যায় তাহলে খাদ্য নির্বাচনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে আপনার ডায়াবেটিক দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হঠাৎ করে আপনার ডায়াবেটিসে বেড়ে গেলে নিম্নের করণীয় সম্পর্কে অবলম্বন থাকতে হবে। তাহলে চলুন নিচের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ডায়াবেটিস-বেড়ে-গেলে-কি-খেতে-হবে

ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে খাদ্য নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে। এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে দ্রুত বাড়িয়ে না তোলে। প্রচুর পরিমাণে জল পান করা এক্ষেত্রে জরুরি, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুনঃ তোকমা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন - সবুজ শাকসবজি (পালং শাক, ব্রকলি, শসা), সালাদ (টমেটো, গাজর), এবং গোটা শস্য (লাল আটা, ওটস) গ্রহণ করা উচিত। এগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রাকে ধীরে ধীরে বাড়ায়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন - ডিম, মাছ, চিকেন (চামড়া ছাড়া) এবং ডাল পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।

ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং কম মিষ্টিযুক্ত ফল যেমন - জাম, পেয়ারা, আপেল অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি ফল, মিষ্টি পানীয়, চিনিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ফাস্ট ফুড সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। ছোট এবং ঘন ঘন খাবার গ্রহণ করা ভালো, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা এবং নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

উপরোক্ত থেকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে আসলাম। কিন্তু এখন আমাদের জানতে হবে হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি। হঠাৎ ডাইবেটিস বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি যদি না জানেন তাহলে সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই দেরি না করে চলুন হঠাৎ ডাইবেটিস বেড়েজার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে শরীরে বেশ কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অস্বাভাবিক তৃষ্ণা অনুভব করা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, এমনকি রাতেও এর প্রবণতা বাড়ে। মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং ত্বক শুষ্ক লাগতে পারে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা বা দেখার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা, কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া, এবং ক্ষুধা বেড়ে যাওয়াও লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। ত্বকে বা যৌনাঙ্গে চুলকানি এবং সহজে ক্ষত না শুকানোও উচ্চ রক্ত শর্করার ইঙ্গিত দিতে পারে। স্নায়ু দুর্বলতা বা ঝিনঝিন অনুভূতিও হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

যদি এই লক্ষণগুলো হঠাৎ করে দেখা দেয় এবং তীব্র হয়, তবে দ্রুত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ এটি ডায়াবেটিসের গুরুতর জটিলতা নির্দেশ করতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয়

আপনার যদি হঠাৎ করে ডায়াবেটিস বেড়ে যায় এবং এই ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার কারণে আপনার শরীরের কি কি সমস্যা হতে পারে তার সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। আর হঠাৎ ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার কারণে আপনার যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন এবং ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করবেন। তাহলে চলুন হঠাৎ ডাইবেটি খুব বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা সম্পর্কে নিম্ন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় প্রকার হতে পারে। স্বল্পমেয়াদী সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, দুর্বলতা, ঝাপসা দৃষ্টি, মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব। রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) বা হাইপারস্মোলার

হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট (HHS)-এর মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে,যা জীবননাশক পর্যন্ত হতে পারে।দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্ত শর্করা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের রক্তনালী ও স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। এর ফলে চোখের রেটিনোপ্যাথি (Retinopathy) হতে পারে, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

কিডনির কার্যকারিতা কমে গিয়ে নেফ্রোপ্যাথি (Nephropathy) এবং স্নায়ুর ক্ষতি (Neuropathy) হতে পারে, যার ফলে হাত-পায়ে অসাড়তা, ব্যথা বা দুর্বলতা দেখা যায়। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া, ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে ডায়াবেটিক ফুট আলসার

এবং সংক্রমণ হতে পারে, যা গুরুতর ক্ষেত্রে অঙ্গচ্ছেদের দিকেও ধাবিত করতে পারে। ত্বক ও দাঁতের সমস্যা, হজমের গোলযোগ এবং যৌন dysfunction-ও ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার অন্তর্ভুক্ত। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

শেষ কথাঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চললে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এবং হঠাৎ ডাইবেটিস বেড়ে দেয়ার লক্ষণ গুলো কি কি। হঠাৎ করে ডায়াবেটিক বেড়ে গেলে খালি পেটে কি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়াও হঠাৎ ডাইবেটিস বেড়ে গেলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, আমি আশা করছি যে আমাদের আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন যে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে সম্পর্কে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি কি করণীয় তার সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে এতক্ষন পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ...............!!!!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url